শান্তিপুর বিষমদ কাণ্ডেও হুঁশ ফেরেনি, ঘাটালে রমরমিয়ে চলছে চোলাই কারবার

শ্রীকান্ত পাত্র, ঘাটাল: বিষমদের কারবার রুখতে পুলিশ ও আবগারি দপ্তরকে শক্ত হাতে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ কিন্তু, কোথায় কী? মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ ও শান্তিপুর বিষমদ কাণ্ডে ১২ জনের মৃত্যুর পরও হুঁশ ফেরেনি ঘাটালের আবগারি দপ্তরের৷ ঘাটাল ব্লকের মনশুকা গ্রাম পঞ্চায়েতের বরকতিপুর ও দীর্ঘগ্রামে রমরমিয়ে চলছে চোলাই মদের কারখানা৷ পাইকারি হারে পাচার হয়ে যাচ্ছে লিটার-লিটার চোলাই৷ তা মোটরবাইক বা সাইকেলে চাপিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে ভিন জেলায়৷ সব জেনেও হুঁশ নেই আবগারি দপ্তরের কর্তাদের৷ তবে, স্থানীয়দের অভিযোগ বেশ তৎপর প্রশাসনিক কর্তা৷ এলাকায় রমরমিয়ে চলা চোলাই কারবারের অভিযোগ প্রসঙ্গে আবগারি দপ্তরের ঘাটাল ওসি তারক মাহাতো বলেন, “মাঝে-মাঝেই চোলাই কারখানায় হানা দেওয়া হয়৷ গ্রেপ্তারও হয়৷ অভিযোগ এলে ফের অভিযান চালানো হবে৷”

[স্মাগলিংয়ের বিরুদ্ধে পুলিশকে কড়া হাতে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর]

তখনও ভোর হয়নি৷ শুক্রবার ঘাটালের মনশুকা গ্রাম পঞ্চায়েতের বরকতিপুর ও দীর্ঘগ্রাম৷ তখনও দাউদাউ করে জ্বলছে উনুন৷ উনুনে চাপানো হয়েছে বড় হাঁড়ি৷ হাঁড়িতে টগবগ করে ফুটছে পচা গুড়৷ সেই বাষ্প থেকে গড়িয়ে পড়ছে চোলাই৷ টাটকা গরম গরম চোলাই নিমেষে পাচার হয়েও যাচ্ছে মোটরবাইকে৷ হাতে গোনা জনা কুড়ি মোটরবাইক আরোহী দাঁড়িয়ে রয়েছেন ভাটির কাছে৷ পরে সংখ্যাটি আরও বাড়তে থাকে৷ চোলাই নিতে লাইন পড়ে যায় এক একসময়৷ উৎসবের মরশুম এলেই তা বেড়ে কয়েক গুণ হয়ে যায় বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চোলাই ব্যবসায়ী৷ তিনি বলেন, “পুলিশ ও আবগারিকে একটু এইসময় আমরা সমঝে চলতে বলি৷ বিনিময়ে মোটা টাকা দিতে হয়৷ তাতে কোনও ক্ষতি নেই৷ পয়সা উসুল হয়ে যায়৷” 

[সাঁতরাগাছি ওভারব্রিজে পদপিষ্টের ঘটনায় জমা পড়ল তদন্ত রিপোর্ট]

দোলইপাড়া, মণ্ডলপাড়া, খাঁপাড়া, ধাড়া পাড়া, পণ্ডিতপাড়ার প্রায় প্রতিটি ঘরে চোলাই মদের কারখানা চলছে অবাধে৷ একটু দূরেই রয়েছে কালীতলা বারোয়ারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি আইসিডিএস কেন্দ্র৷ রয়েছে বেশ কয়েকটি পুকুর৷ সেই পুকুরের জল মিষকালো৷ উড়ছে মশা মাছি৷ দুর্গন্ধে টেকা দায়৷ তবে, এই রেওয়াজ দু’এক বছরের নয়, চলছে বছরের পর বছর৷ মনশুকার দীর্ঘগ্রামকে বলা হয় চোলাই মদের রাজধানী৷ আবগারি দপ্তর থেকে যে বার কয়েক হানা দেওয়া হয়নি, তা নয়৷ মাঝে মাঝেই হানা দেওয়া হয়৷ এমনকী গ্রেপ্তারও করা হয়েছে কয়েকজন চোলাই ভাটির মালিককে৷ দু’দিন জেলের ভাত খেয়ে গ্রামে ফিরে এসে চলে চোলাই তৈরির কারবার৷

[কেন্দ্রীয় ইস্পাত মন্ত্রীকে ঘিরে বিক্ষোভ, ধুন্ধুমার দুর্গাপুর শিল্পতালুকে]

চোলাই নিয়ে ক্ষোভের শেষ নেই দু’গ্রামের বাসিন্দারা৷ স্থানীয়রা জানান, মাঝে-মাঝে গ্রামের মানুষ অতিষ্ট হয়ে চোলাই কারখানায় ভাঙচুর চালায়৷ কিন্তু, ফের গজিয়ে ওঠে চোলাই তৈরির কারখানা৷ ঘাটাল ব্লক তৃণমূল সভাপতি তথা ঘাটাল পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি দিলীপ মাজি বলেন, “আবগারি দপ্তর কী জন্য রয়েছে বলতে পারেন? ওদের মদতেই তো চোলাইয়ের রমরমা৷ ওরা সব জানে৷ আমরাও খুব উদ্বিগ্ন৷”

ছবি: সুকান্ত চক্রবর্তী



Bengali News Bengali News via Sangbad Pratidin

Comments

Popular posts from this blog

দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন, বেকারত্ব কমানো হাসিনার নয়া চ্যালেঞ্জ

ভারতীয় মহিলা দলে শেষ পাওয়ার জমানা, নতুন কোচের খোঁজে বোর্ড

কাঠমিস্ত্রীকে কিডন্যাপ করে খুনের হুমকি, গ্রেপ্তার ছয় যুবতী