সুন্দরবনের জঙ্গলে স্বামীর দেহ আগলে রাতভর বসে থাকলেন স্ত্রী

দেবব্রত মণ্ডল, দক্ষিণ ২৪ পরগনা: মৃত স্বামীকে বুকে আঁকড়ে রাতভর জঙ্গলে বসে স্ত্রী। সারারাত প্রবল ঠান্ডার মধ্যে আটকে পড়ে আছেন জনবিচ্ছিন্ন নির্জন দ্বীপে। চারিদিক থেকে ধেয়ে আসছে বাঘ-শুয়োর-সহ হাজারো পশু। এই ভাবে কিছুক্ষণ থাকতে থাকতে অবশেষে জ্ঞান হারান স্ত্রী নিজেও। দুই দিন পর উদ্ধার করা হল তাঁকে। গ্রামবাসী, ব্যাঘ্র প্রকল্পের কর্মী ও পুলিশের সহযোগিতায় ওই মহিলাকে ভরতি করা হয় হাসপাতালে। ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবনের কোস্টাল থানার কুমিরমারী গ্রামে।

[ চেন কিলার’-এর দৌরাত্ম্য কালনায়, গলায় লোহার শিকল পেঁচিয়ে চলছে লুটপাট]

জানা গিয়েছে, কুমিরমারী গ্রামের বাসিন্দা পরিতোষ মণ্ডল ও তাঁর স্ত্রী অনিমা কাঁকড়া ধরতে গিয়েছিলেন সুন্দরবনের বসিরহাট রেঞ্জের আড়বেঁশের জঙ্গলে। জঙ্গলে নেমে আসে অন্ধকার। নৌকা খাঁড়িতে রেখে জঙ্গলের মধ্যে কাঁকড়া ধরতে নামেন ওই দম্পতি। কিন্তু রাস্তা গুলিয়ে ফেলেন তাঁরা। দিনের আলো না ফুটলে নৌকায় ফেরা যে আর সম্ভব নয় তা বুঝতে পারেন দু’জনই। সারা দিন না খেয়ে আর শীতের মধ্যে পড়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান পরিতোষ। চোখের সামনে স্বামীকে মরতে দেখেও কিছুই করার ছিল না অনিমার। মৃত স্বামীকে কাঁধে নিয়ে রাতের অন্ধকারে বাঘের ভয়ে চলে আসেন একটি নদীর চড়ায়। সুন্দরবনের নদীর খাঁড়িতে তখন জোয়ার শুরু হয়েছে। জঙ্গলের নিঝুমতা ভেঙে তখন চারিদিক দিয়ে ধেয়ে আসছে হিংস্র পশুর গর্জন। আর সেই শব্দ শুনে একসময়ে জ্ঞান হারান অনিমাও। 

এদিকে পরিতোষ ও অনিমা জঙ্গল থেকে না ফেরার বনদপ্তরে খবর দেন কুমিরমারী গ্রামের বাসিন্দারা। শেষপর্যন্ত স্থানীয়দের সহযোগিতায় ওই দম্পতিকে জঙ্গল থেকে উদ্ধার করে বনদপ্তরের কর্মীরা। জঙ্গল থেকে ফিরে এখনও আতঙ্ক কাটেনি অনিমার। তিনি বলেন,  ‘আমরা ছোট ডিঙি নৌকা নিয়ে বহু দিন যাবৎ জঙ্গলে মাছ-কাঁকড়া ধরে সংসার চালাই। সে দিনও গিয়েছিলাম কাঁকড়ার খোঁজে। কাঁকড়া ধরে বাড়ি ফিরে আসার সময় খোঁজ পাইনি আমাদের নৌকার। তার মধ্যেই চোখের সামনে মারা যায় স্বামী। কী করব বুঝে উঠতে পারিনি। বাঘের ভয়ে নিজেরও প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই অবস্থায় স্বামীকে টেনে নিয়ে গেলাম জঙ্গলের মাঝে একটি উঁচু চৃড়ায়। কাঁটার আঁচড়ে তখন ক্ষতবিক্ষত আমার শরীর। এরপর সেখানেই রাত কাটে। জ্ঞান ফিরে দেখি মোল্লাখালি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শুয়ে আছি।” ওই দম্পতির ছেলের বয়স দশ বছর। অভাবে তাড়নায় সে পড়াশোনা ছেড়েছে বহু বছর আগে। এখন বাড়ির রোজগেরে সদস্য মারা যাওয়ায় কী করে সংসার চলবে বুঝতে পারছেন না।

[ শিক্ষক নেই স্কুলে, পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ তৈরি করছে স্থানীয় দাদা-দিদিরা]



Bengali News Bengali News via Sangbad Pratidin

Comments

Popular posts from this blog

তোলা চেয়ে জেল থেকেই ব্যবসায়ীকে হুমকি ফোন গব্বর-রমেশের

‘পাক সহায়তায় মোদিকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চাইছে কংগ্রেস’, আক্রমণ প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর

পেট্রোল ছাড়াই চলবে বাইক, দিশা দেখালেন নদিয়ার স্কুল মাস্টার